কারেন্ট এবং ভোল্টেজের মধ্যে পার্থক্য কী? voltage vs current

 কারেন্ট (Current) এবং ভোল্টেজ (Voltage) — এ দুটি বিদ্যুতের গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক উপাদান, তবে এদের মধ্যে মূল পার্থক্য রয়েছে। নিচে সহজভাবে ব্যাখ্যা করছি:


🔌 কারেন্ট (Current) কী?

সংজ্ঞা: কারেন্ট হলো কোনো পরিবাহকের মধ্য দিয়ে ইলেকট্রনের প্রবাহ।

একক: অ্যাম্পিয়ার (Ampere, সংক্ষেপে A)

কী প্রকাশ করে: এক সেকেন্ডে কতগুলো ইলেকট্রন প্রবাহিত হচ্ছে।

প্রবাহের দিক: সাধারণত ধরা হয় পজিটিভ চার্জের দিক থেকে নেগেটিভ চার্জের দিকে (কিন্তু বাস্তবে ইলেকট্রন চলে উল্টো দিকে)।

🧪 উদাহরণ: কোনো বৈদ্যুতিক তারে কারেন্ট প্রবাহিত হচ্ছে মানে, সেই তারে ইলেকট্রনের চলাচল হচ্ছে।


⚡ ভোল্টেজ (Voltage) কী?

সংজ্ঞা: ভোল্টেজ হলো দুইটি বিন্দুর মধ্যে বৈদ্যুতিক পটেনশিয়াল পার্থক্য।

একক: ভোল্ট (Volt, সংক্ষেপে V)

কী প্রকাশ করে: একটি চার্জ কণিকাকে এক বিন্দু থেকে আরেক বিন্দুতে সরাতে হলে কতটুকু শক্তি লাগে।

কার্য: এটি কারেন্ট চালাতে সাহায্য করে — একে "driving force" বলা যায়।

🧪 উদাহরণ: ব্যাটারির ১.৫V মানে ব্যাটারির দুই টার্মিনালের মধ্যে ১.৫ ভোল্টের পটেনশিয়াল ডিফারেন্স রয়েছে।


🔁 মূল পার্থক্য:

বিষয়

কারেন্ট (Current)

ভোল্টেজ (Voltage)

কি মাপে

ইলেকট্রনের প্রবাহ

শক্তির পার্থক্য

একক

অ্যাম্পিয়ার (A)

ভোল্ট (V)

ভূমিকা

কাজ সম্পাদন করে (ইলেকট্রিক্যাল পাওয়ার দেয়)

কারেন্ট চালানোর জন্য চাপ বা ড্রাইভিং ফোর্স

প্রবাহিত হয় কিনা

হ্যাঁ, এটা প্রবাহিত হয়

না, এটা এক ধরনের পার্থক্য মাত্র


⚙️ সহজ উপমা:

ধরুন একটি পানির ট্যাঙ্ক আছে:

ভোল্টেজ হলো ট্যাঙ্কের উচ্চতা থেকে নিচ পর্যন্ত পানির চাপ (পোটেনশিয়াল ডিফারেন্স)।

কারেন্ট হলো সেই পানির প্রবাহ, যা পাইপ দিয়ে নিচে নামছে।


আরো বিস্তারিত ভাবে তুলে ধরা হলো:-

পরিবাহীর পরমানুগুলোর ইলেকট্রনসমূহকে স্থানচ্যুত করতে যে বল বা চাপের প্রয়োজন তাকে বিদ্যুৎ চালক বল বা ভোল্টেজ বলে । ভোল্টেজ এর প্রতীক হলো V (ভি) এবং এর একক হলো Volt(ভোল্ট) ।


ভোল্টেজ পরিমাপের যন্ত্রের নাম Volt Meter (ভোল্ট মিটার)।

ভোল্ট মিটার সাধারণত যে দুই পয়েন্টের বিভব পার্থক্য নির্ণয় করতে হবে তার সাথে Parallel বা সমান্তরাল ভাবে কানেক্ট করতে হয় ।

ভোল্টেজ(V) = কারেন্ট(I) × রেজিস্ট্যান্স(R) 


কারেন্ট কি ?

পদার্থের মধ্যে অবস্থানকৃত মুক্ত ইলেকষ্ট্রন সমূহ নিদিষ্ট দিকে প্রবাহিত হওয়ার হারকে কারেন্ট বলে ।

অথবা,

একটি পরিবাহী পদার্থের ভিতর দিয়ে চার্জ এর গতিকে কারেন্ট বলা হয় ।

কারেন্টের প্রতীক হলো = “ I ” .

কারেন্টের একক হলো = Ampere (A) .

পরিমাপের যন্ত্র হলো = Ampere meter বা Ammeter .

এমিটার সিরিজ কানেকশনে কানেক্ট করতে হয় ।


কারেন্ট প্রধানত তিন প্রকার :

১) এসি কারেন্ট

২) ডিসি কারেন্ট

৩) এডি কারেন্ট 


এসি কারেন্ট বলতে কি বুঝায় ?

“এসি (AC)”- পূর্ন অর্থ হলো অল্টারনে



টিং কারেন্ট (Alternating Current) । অর্থাৎ সময়ের সাথে যে কারেন্টের মান পরিবর্তীত হয় তাকে এসি কারেন্ট বলা হয় । বাসা বাড়ীতে ট্রান্সমিশন লাইন দিয়ে যে বিদ্যুৎসরবরাহ করা হয় তা হচ্ছে এসি কারেন্ট ।


পরের চিত্রটিতে x অক্ষ বরাবর Time(সময়) এবং Y অক্ষ বরাবর Current(কারেন্ট) এর দিক নির্দেশ করা হয়েছে । চিত্রটি ভালো করে পর্যবেক্ষন করে দেখ বিভিন্ন সময়ে কারেন্টের মান বিভিন্ন হচ্ছে । অর্থাৎ সময়ের সাথে এর মান পরিবর্তীত হচ্ছে । তাই আমরা একে অল্টারনেটিং কারেন্ট বলে থাকি ।


ডিসি কারেন্ট বলতে কি বুঝায় ?

“ডিসি (DC)”- পূর্ন অর্থ হলো ডিরেক্ট কারেন্ট । অর্থাং সময়ের সাথে যে কারেন্টের মানের কোন পরিবর্তন হয় না , তাকে ডিসি কারেন্ট বলে । টর্চ লাইটে পাচ ভোল্টের ব্যাটারী যে বিদ্যুৎ দিয়ে থাকে তা হল ডিসি কারেন্ট।


উপরের চিত্রটিতে x অক্ষ বরাবর Time(সময়) এবং Y অক্ষ বরাবর Current(কারেন্ট) এর দিক নির্দেশ করা হয়েছে । চিত্রটি ভালো করে পর্যবেক্ষন করে দেখ বিভিন্ন সময়ে কারেন্টের মান 1A অপরিবর্তীত আছে ।


অর্থাৎ সময়ের সাথে সাথে এর মান অপরিবর্তীত থাকে । তাই একে আমরা ডিসি কারেন্ট (Direct current) বলি ।


এডি কারেন্ট বলতে কি বুঝায় ?

তামার তার দিয়ে তৈরী কয়েল থেকেই মুলত এডি কারেন্ট(Eddy Current) উৎপন্ন হয়ে থাকে । যেমন : ট্রান্সফরর্মার , মটর ইত্যাদি ।

এসি কারেন্ট যখন কোন কয়েলের ভিতর দিয়ে চলাচল করে, তখন এটি কয়েলের ভিতর এবং কয়েলের চারপাশে ম্যাগনেটিক ফিল্ড (magnetic fields) তৈরি করে । এই ম্যাগনেটিক ফিল্ড মূলত তারের চারিদিকে ফিতার মত জড়িয়ে থাকে । পরবর্তীতে এই ফিতার মত অসংখ্যক ম্যাগনেটিক ফিল্ড গুলো একত্র হয়ে একটি বড় লুপের সৃষ্টি করে ।

যদি কোন কারণ বসত এই লুপের কোন একটির কারেন্ট বেড়ে যায়, তাহলে এই কারেন্ট -এর আশেপাশের সমস্ত লুপের ম্যাগনেটিক ফিল্ড কে বাড়িয়ে দেয় । যার ফলে ভোল্টেজ তৈরী হয় । ভোল্টেজ উৎপন্ন হলে তো অবশ্যই ইলেকট্রনের ফ্লো হবে । আর ইলেকট্রনের ফ্লো হলেই কারেন্ট উৎপন্ন হবে । এই কারেন্টকেই বলা হয়ে থাকে এডি কারেন্ট । 

এডি কারেন্ট হলো এক প্রকার লস (Loss) । লস বলছি কারণ, এই কারেন্ট আমাদের কোন কাজে আসে না ।


What is the difference between current and voltage




Tags

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.