সার্কিট কাকে বলে - শর্ট সার্কিট বলতে কি বুঝায়? Electronic circuit
বিদ্যুৎ কোনো উৎস হতে বের হয়ে যে পথ অতিক্রম করে এবং পুণরায় সে উৎসের মধ্যে ফিরে আসে, বিদ্যুৎ চলাচলে এর সম্পূর্ণ পথকে বৈদ্যুতিক সার্কিট (Electric Circuit) বলে। এক কথায় বলা যায়, বিদ্যুৎ চলাচলের পূর্ণ পথকে বৈদ্যুতিক সার্কিট বলে।
সার্কিট কাকে বলে?
উত্তরঃ কারেন্ট প্রবাহের সমগ্র পথকে সার্কিট বলে ।
সার্কিট প্রধানত দুই প্রকার ।
যথা-
১। সিরিজ সার্কিট ।
২। প্যারালাল সার্কিট ।
এছাড়াও আমরা আর ও
এক ধরনের সার্কিট ব্যবহার
করে থাকি। নাম মিশ্র সার্কিট ।
এদের প্রত্যেকের সংগা-
১। সিরিজ সার্কিটঃ একাধিক লোডসমূহকে একের পর এক সংযোগ করে,যে সার্কিট তৈরী করা হয়,তাকে সিরিজ সার্কিট বলে ।
২। প্যারালাল সার্কিটঃ যে সার্কিটে কারেন্ট প্রবাহের একাধিক পথ থাকে তাকে প্যারালাল সার্কিট বলে।
৩। মিশ্র সার্কিটঃ সিরিজ ও প্যারালাল সার্কিট এর সমন্বয়ে গঠিত সার্কিটকে মিশ্র সার্কিট বলে ।
একটি আদর্শ সার্কিটের ৫ টি উপাদান থাকে।
যথাঃ
১. বিদ্যুতিক উৎস ব্যাটারি, জেনারেটর।
২. পরিবাহি তামা বা এ্যালুমিনিয়ামের তার।
৩. নিয়ন্ত্রন যন্ত্র সুইচ।
৪. ব্যবহার যন্ত্র বাতি, পাখা ও মোটর।
৫. রক্ষন যন্ত্র ফিউজ ও সার্কিট ব্রেকার।
ইলেকট্রিক সার্কিটের উপাদান সমূহ
একটি আদর্শ সার্কিটের পাঁচটি প্রয়োজনীয় উপাদান থাকে। যেমন–
১. বিদ্যুতের উৎসঃ যেমন- ব্যাটারি, জেনারেটর ইত্যাদি।
২. পরিবাহীঃ যেমন- তামা বা অ্যালুমিনিয়ামের তার ইত্যাদি।
৩. নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রঃ যেমন-সুইচ, রিলে, সকেট ইত্যাদি।
৪. ব্যবহার যন্ত্রঃ যেমন-বাতি, পাখা, মােটর ইত্যাদি।
৫. রক্ষণ যন্ত্রঃ যেমন-ফিউজ, সার্কিট ব্রেকার ইত্যাদি।
ইলেকট্রিক সার্কিটের প্রকারভেদ
বৈদ্যুতিক লোডের উপর ভিত্তি করে সার্কিট ৩ প্রকার। যথা-
১) ওপেন সার্কিট (Open Circuit)
২) ক্লোজ সার্কিট (Closed Circuit)
৩) শর্ট সার্কিট (Short Circuit)
সংযোগের উপর ভিত্তি করে সার্কিট ৩ প্রকার। যথা-
১) সিরিজ সার্কিট (Series Circuit)
২) প্যারালাল সার্কিট (Parallel Circuit)
৩) মিশ্র সার্কিট (Mixed Circuit)
উৎসের উপর ভিত্তি করে সার্কিট ২ প্রকার। যথা-
১) এসি সার্কিট (AC Circuit)
২) ডিসি সার্কিট (DC Circuit)
ওপেন সার্কিট (Open Circuit)
যদি কোনো সার্কিটের অংশ বিযুক্ত বা খোলা থাকে এবং ঐ অংশে কোনো কারেন্ট প্রবাহিত না হয়, তবে তাকে ওপেন সার্কিট বলে। এটি এক জায়গায় চার্জ রাখতে ব্যবহার করা যেতে পারে অর্থাৎ এটিকে প্রবাহিত হতে না দেওয়া, যেমন ব্যাটারি বা পাওয়ার ব্যাংককে সার্কিটে রাখার মতো, তবে এটি মূল সার্কিটের সাথে সংযোগযুক্ত রাখার মতো।
ওপেন সার্কিটের ব্যবহার
ওপেন সার্কিটের সাধারণ ব্যবহার হল কোন কিছু বন্ধ করা। ফলে সার্কিটের মধ্য দিয়ে কোন কারেন্ট প্রবাহিত হয় না এবং কাজ করা নিরাপদ। বিংশ শতাব্দীর “পুরানো দিনগুলোতে” কেবল কিছু বন্ধ করাই একমাত্র উপায় ছিল কিন্তু এখন অনেকগুলো ডিভাইস (টিভি, কম্পিউটার) বন্ধ করার জন্য একটি সত্যিকারের ওপেন সার্কিট ব্যবহার না করে বরং তার পরিবর্তে অল্প-কারেন্ট/শক্তি ব্যবহার করে কন্ট্রোলার ব্যবহার করা হয়। যেমন রিমোট কন্ট্রোল।
ক্লোজ সার্কিট (Closed Circuit)
যে সার্কিট শর্ট সার্কিট বা ওপেন সার্কিট নেই অর্থাৎ একটি আদর্শ সার্কিটকে ক্লোজড সার্কিট বলে। কারেন্ট চলাচলের সম্পূর্ণ পথকেই ক্লোজড সার্কিট বলে। ক্লোজ সার্কিটে কারেন্ট কোন প্রকার সমস্যা ছাড়া ধারাবাহিকভাবে প্রবাহিত হতে পারে। অর্থাৎ এটি ওপেন সার্কিট যেমন খোলা থাকে যেখানে কারেন্ট ফ্লো হতে পারেনা, কিন্তু ক্লোজ সার্কিট হলো বন্ধ সার্কিট যেখানে কারেন্ট প্রবাহিত হতে পারে। ফলে লোড সচল থাকে।
ক্লোজ সার্কিটের ব্যবহার
একটি ক্লোজ সার্কিট এমন একটি সার্কিট যা সম্পূর্ণ, পুরোপুরি কারেন্ট প্রবাহিত করতে পারে। আমাদের ব্যবহৃত একটি সাধারণ টচ-লাইট থেকে শুরু করে মোবাইল, টিভি, কম্পিউটার এবং ল্যাপটপ সহ সবকিছুতেই ক্লোজ সার্কিট এর ব্যবহার করা হয়।
শর্ট সার্কিট (Short Circuit)
যদি কোনো কারণে কোনাে সার্কিটের মধ্যবর্তী এক বা একাধিক অংশ শর্ট হয়ে যায়, যাতে কারেন্ট কোনাে লােড বা রেজিস্টরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত না হয়ে সরাসরি প্রবাহিত হয়, তবে এ প্রকার সার্কিটকে শর্ট সার্কিট বলে। মূলত ওপেন সার্কিট বা খোলা বর্তনীর বিপরীত হলো শর্ট সার্কিট, যেখানে বর্তনীর দুটি বিন্দুর মধ্যে কোন প্রকার রোধ-ই নাই। সাধারণভাবে অনেকেই সত্যিকার কারণ না জেনে, যেকোনো ধরনের বৈদ্যুতিক ত্রুটিকে ঢালাওভাবে শর্ট-সার্কিট বলে আখ্যায়িত করে থাকে। শর্ট সার্কিট এর মধ্য দিয়ে অতিরিক্ত কারেন্ট প্রবাহিত হতে পারে ফলে তাপ বা তড়িতের ফুলকি সৃষ্টি করতে পারে।
শর্ট সার্কিটের ব্যবহার
বিভিন্ন বৈদ্যুতিক মেশিনের (যেমনঃ ট্রান্সফরমার) ডিজাইনে শর্ট সার্কিট ব্যবহার করা হয়।
বৈদ্যুতিক মেশিনের রেটিং, ভোল্টেজ রেগুলেশন ইত্যাদি কাজের জন্য শর্ট সার্কিট পরীক্ষা করা হয়ে থাকে।
যন্ত্রের তূল্য বর্তনী নির্ণয়ের কাজেও শর্ট সার্কিট পরীক্ষার করা হয়।
শর্ট সার্কিট প্রক্রিয়া ব্যবহার করে আর্ক ওয়েল্ডিং করা হয়ে থাকে।
ধন্যবাদ,
সাথেই থাকুন।